ভোলাদর্পণ প্রতিবেদক: ভোলায় আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ২০টি বসত ঘর, ১৫টি দোকান, চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়েছে। রবিবার (২৫ জুন) বিকেল থেকে দিবাগত রাত ১০টা পর্যন্ত ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় দফায় দফায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ জুন লালমোহন উপজেলার ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের আব্দুল হান্নান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিবিএস ও নাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান, ভোলা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার। সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ উত্তেজনা রবিবার বিকেলে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এটিকে কেন্দ্র করে বিকেলের দিকে তজুমদ্দিনের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের বাড়িতে ৫০০-৬০০ লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র, ধাড়ালো অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় চাচড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ১৫টি দোকান ও ৮টি ঘর ভাঙচুর করা হয়। এক জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর রাত ৮টার দিকে পার্শ^বর্তী লালমোহন উপজেলার ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদারের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় হামলাকারীরা বোমা ফাটিয়ে দুইটি বাড়ির ১২টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং ভাঙচুর করা হয়েছে চারটি মোটরসাইকেল। হামলাকারীদের ভয়ে বাড়ির লোকজন অন্যত্র পালিয়ে গেলে ঘরের বেড়া, দরজা-জানালা কুপিয়ে তছনছ করা হয়। এমনকি ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় হামলাকারীরা। এ ঘটনায় ওই দুই ইউনিয়নে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সোমবার দিনভর ওই দুই ইউনিয়ন ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।তজুমদ্দিনের চাচড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম হান্নান অভিযোগ করে জানান, আমি ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদারের সমর্থক। এ জন্য বর্তমান সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন আমাকে দীর্ঘদিন যাবত হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলো এবং একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ও আমার লোকজনকে হয়রানি করছে। এমপি শাওনের নির্দেশে রবিবার বিকেলে চাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহেরের নেতৃত্বে লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তার বসতঘরসহ স্থানীয় ৭-৮টি ঘর ও ১৫টি দোকান ভাঙচুর চালানো হয়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থল থাকলেও হামলাকারীদের কিছুই বলেননি।
ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের সেরাজল হক হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা মো. ফখরুল ইসলাম হাওলাদার জানান, তারা পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ করে আসছেন। তাদের চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাওয়ায় তারা পারিবারিকভাবেই তার পক্ষে কাজ করছেন। এই সূত্র ধরে তাদেরকে স্থানীয় এমপির নির্দেশে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। তাই গ্রেপ্তারের ভয়ে তাদের বাড়ির কোনো পুরুষ রাতে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এ অবস্থায় রবিবার রাতে তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক দেওয়ান, চাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহেরসহ লালমোহন-তজুমদ্দিনের প্রায় ৫০০ শতাধিক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলার খবর পেয়ে বাড়ির নারীরা ও শিশুরা যে যার মতো বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে হামলাকারীরা ঘর-বাড়ি কুপিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের কিছুই বলেনি। এ ঘটনায় তারা আতঙ্কিত রয়েছেন।
নুরজাহান বেগম নামের ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, পুলিশের সামনেই তাহের চেয়ারম্যানের লোকেরা আমাদের সব ভাংচুর করে নিয়ে গেছে। আমরা এখন জীবন নিয়ে শঙ্কিত আছি।
নিরব হোসেন নামের এক যুবলীগ কর্মী বলেন, আমরা নোমান হাওলাদারের লোক এটাই আমাদের অপরাধ। যার জন্য আমাদের উপর হামলা চালিয়ে বাড়ীঘর ভাঙচুর করে আবার উল্টা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।হান্নান চেয়ারম্যানের ভাতিজা জিহাদ বলেন, ২০০১ সালের বিএনপি-জামাতকেও হার মানিয়েছে আমাদের বাড়ীর ঘটনা। পুলিশের সামনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাহের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমাদের অপরাধ আমরা নোমান হাওলাদারের সমর্থক।
তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক দেওয়ান জানান, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি চাচড়া ইউনিয়নের ঘটনা শুনেছেন। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান হান্নান এক জন ইউপি সদস্যকে তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মরধর করে গুরুতর আহত করে। এছাড়াও ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মারধর করেছে। এ ঘটনা নিয়ে সেখানে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে লালমোহনের ধলিগৌরনগর ইউনিয়নের ঘটনা তার জানা নেই।
চাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের জানান, হান্নান চেয়ারম্যান গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। সে থেকে সে ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। সেই সূত্র ধরে রবিবার বিকেলে তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এক ইউপি সদস্যকে মারধর করে আহত করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গুলি করেছেন। এতে যুবলীগ নেতা নাজিম গুলিবিদ্ধসহ তাদের পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় তারা থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে তারা কারো ওপর হামলা করেননি।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, হান্নান চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে কোনো হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রন করেছেন। এ ঘটনায় আবু তাহের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি মারামারির মামলা করেছে। ওই মামলায় ৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে হান্নান চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে থেকে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।